০১ -পর্ব








আজই অন্তী আর তূর্যর পারিবারিক ভাবেই বিয়ে হয়েছে।তূর্য অন্তির ফুপাতো ভাই।ফুপু এই বিয়েতে রাজি না থাকলেও অন্তীর দাদীর জেদের বসেয় অন্তীর আর তূর্যর বিয়েটা তরিঘরি করে দিয়ে দেওয়া হয়।


 অন্তীরা চার বোন।তাদের মধ্যে অন্তীই সবার বড়।অন্তী সবে মাত্র ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছে।এরই মধ্যে অন্তীর বাবার একটা রোড অ্যাক্সিডেন্টে ডান পাশটা প্যারালাইসিস হয়ে যায়।


 ব্যাস অন্তীর বাবার চাকরিটাও আর নেই।অন্তীদের পরিবারের এখন একরকম হা-ভাত দশা।


 এদিকে তূর্য বিদেশ থেকে পিএইচডি করে সবে মাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসরের পদে নিয়োগ প্রাপ্ত।

( ভালোবাসার গল্প) 

 এমন সোনারটুকরো ছেলেকে এরকম একটা পরিবারে বিয়ে দিতে একেবারে নারাজ তূর্যর মা।যতই ভাইয়ের মেয়ে হোক তবুও এমন উচ্চ শিক্ষিত ছেলেকে কোনো উচ্চ পরিবারেই বিয়ে দেওয়া যায়।ভাই যদি সুস্থ থাকতো চাকরি বাকরি করতো তাও হতো কিন্তু এখন পরিবারের এই দশা গোটা পরিবারটাই তো ছেলের ঘারে এসে পড়বে।এরকম পরিবারে আত্মীয়তা করতে চায় না সে।


 কিন্তু বৃদ্ধ মা যখন অন্তীকে তার ঘরের বউ করার জন্য কাকুতিমিনতি করলো তা আর সে ফেলতে পারলো না।যদিও তার ধারনা ছিলো তূর্য অন্তীকে একদম পছন্দ করে না।অতএব তূর্য নিজেই নানী কে এই বিয়েতে না করে দিবে। ( Romantic story)


 মনের মধ্যে একরাশ কালো মেঘ রেখেই এই বিয়েতে মত দিয়ে দিলো অন্তীর ফুপু তমসা বেগম।


 তূর্য দুদিন হলো এদেশে ফিরেছে।বিয়ে নিয়ে আপাতোতো তার কোনো পরিকল্পনায় ছিলো না।হটাৎ করেই নানুমুনির বিয়ে নিয়ে মাতামাতি আনুনয় বিনুনয় দেখে তূর্য আর কোনো কথা বলে নি।


 বলতে গেলে কোনো কথায় সে বলে নি না বলেছে হ্যা, না বলেছে না।


ভালোবাসার গল্প page


 মৌনতা সম্মতির লক্ষন ভেবে সবাই তড়িঘড়ি করেই বিয়ের যোগাড় করা শুরু করে দেয়।


 অন্তী সবে টিউশন থেকে বাড়ি ফিরেছে। অন্তী বাড়ি ফিরতে দেখেই দীদা আর মা তার গায়ে একটু হলুদ ছুঁয়ে দেয়।


 অন্তী অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকাতেই তারা জানিয়ে কোনো উওর না দিয়ে অন্তীকে একটা লাল বেনারসি সাড়ি বার করে দেয়।


 অন্তী অবাক হয়ে তাকায় মায়ের দিকে


 -এটা তো তোমার বিয়ের শাড়ি।এটা দিয়ে আমি কি করবো আমাকে কেন দিচ্ছো


 অন্তীর মা আচঁল দিয়ে মুখ ঢেকে কান্না জুড়ে দেয়।


 -এখন আমাদের অবস্থা তো জানিসই এর চেয়ে বেশি দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই।।তোকে একটু গয়না গড়িয়ে দিবো সেই সামর্থও আল্লাহ আমাদের দেয় নি।


 অন্তী অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে।অন্তীর মা আর দাদী মিলে অন্তীকে সাজিয়ে গুছিয়ে বিছানায় বসিয়ে দেয়।


 অন্তী শুধু অবাক হয়ে তাদের কর্ম কান্ড গুলো দেখছে।


 এরই মধ্যে তূর্যকে নিয়ে তূর্য ছোট ভাই বড় ভাই, বড় ভাবি আর বাবা চলে এসেছে।এই বিয়েতে মায়ের আপত্তি থাকলেও তূর্যর বাবার কোনো আপত্তি নেই।কারন তূর্যর বাবা আর অন্তীর বাবা সেই ছেলে কালের বন্ধু।


 অন্তী একা একা চুপচাপ বসে আছে।হটাৎ করেই অন্তীর ছোট বোন অন্তীর কানে কানে এসে বলে


 -আপু আজ তোর বিয়ে


 অন্তি একবার চোখ তুলে তাকায় অর্নার দিকে


 -আমি কিছুটা আন্দাজ করেছিলাম।


 -শুনবি না কার সাথে বিয়ে??


 -শুনে কি লাভ।বিয়েটা তো হবেই আমি না চাইলেও হবে।


 -হ্যা তা হবে।জানিস আপু তোর কার সাথে বিয়ে হচ্ছে??


 -না জানি না।কি করে জানবো আমাকে তো কেউ কিছু বলে নি না মা না দীদুন


 - তোর বিয়েটা তূর্য ভাইয়ার সাথে হচ্ছে।


 নামটা শোনা মাত্রই অর্নীর বুকের ভেতরটা ধক করে উঠে।চোখ দুটো ভিজে উঠে


 -এই লোকটা কি কোনো দিনও আমাকে শান্তুি দিবে না আবার আমাকে সেই আগের মতো.........(মনে মনে)


 অর্না অন্তীর দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে হাত দুটো বাড়িয়ে দেয়


 -দেখ আপু তূর্য ভাইয়া আমাদের সবার জন্য কতো চকোলেট আমাদের জন্য অনেক সুন্দর সুন্দর গিফট ও এনেছে এগুলো গত কালই দিয়ে গেছিলো শুধু তোর জন্য আনে নি আবার তোকে কিছু দিতে মানাও করে গেছে।


 কথাগুলো বলেই অর্না বাহিরে চলে যায়।


 বর যে চলে এসেছে।


 বেশ ঘরোয়া ভাবেই অন্তীর সাথে তূর্যর বিয়েটা হয়ে যায়।সব নিয়ম শেষে কবুল বলার পরপরই হটাৎ তূর্য উঠে দাড়ায়।


 সবাই অবাক হয়ে তাকায় তূর্যর দিকে


 -কি হয়েছে বাবা(অন্তীর মা)


 -(....)


 -দাদু ভাই কি হলো তুমি উঠে দাড়ালে কেন?(দাদী)


 -নানুমুনি আশা করি এখানে আমার প্রয়োজন শেষ আমি আসছি।


 -মানে কি বাবা.... কোথায় যাচ্ছো তুমি??(বাবা)


 -তোমরা অন্তী নিয়ে বাড়ি এসো আমি যাচ্ছি....


 কথাগুলো বলেই তূর্য সেখান থেকে বেরিয়ে যায়।সবাই তো অবাক।অনেক ডাকাডাকির পরও তূর্য পেছন ফিরে তাকায় না।


 অর্নীর গাল বেয়ে কয়েকফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে।অর্নীর অন্তর আত্না বলে উঠে


 এই তো সবে শুরু হয়তো সামনে আরো অনেক অবহেলা অপেক্ষা করছে


 অবশেষে তূর্যর পরিবারের লোকেরাই অন্তীকে বাড়িতে এনে তোলে।


 সবাই অন্তীকে ড্রইং রুমে রেখেই যে যার ঘরে চলে যায়।অন্তী সিড়ির কাছে দাড়িয়ে আছে।কোন দিকে যাবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না।বেশ কিছু সময় দাড়িয়ে থেকেও কারো হুদিশ মিল্লো না।


 এদিকে তমসা বেগমেরও কোনো হুদিশ নেই।সে তো ঘরের দরজা এটে বসে আসে।


 তার মাথায় একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে তূর্য কেন অন্তীকে বিয়ে করতে রাজী হলো


 এতোক্ষন দাড়িয়ে দাড়িয়ে অন্তীর পা ব্যাথ্যা হয়ে গেছে অন্তী সবে মাত্র কাউকে একটা ডাকতে যাবে তখনই তাকিয়ে দেখে তূর্যর ছোট ভাই তিয়াশ উপর থেকে সিড়ি বেয়ে নামছে....


 অন্তী তিয়াশ কে দেখে একটু এগিয়ে গিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে পড়ে....


 -ভাইয়া কোন দিকে যাবো?আমি তো এই নতুন বাড়িতে কখনো আসি নাই!!


 -ওফ আমার ভুল হয়ে গেছে তোমাকে তোমার ঘর পর্যন্ত ছেড়ে দেওয়া উচিৎ ছিলো।আসলে আমি ভেবেছিলাম বড় ভাবী হয়তো...আচ্ছা বাদ দাও চলো আমার সাথে.....


 তিয়াশ অন্তীকে ঘরে রেখে বেরিয়ে আসে।অন্তী গোটা ঘরটা ঘুরে ঘুরে দেখছে।ঘরটা দেখে বোঝাউ যাচ্ছে না এটা কোনো বাসর ঘর।ঘরটা স্বাভাবিক ভাবেই বেশ ছিমছাম পরিপাটি করে গুছানো।


 তূর্য ভাইয়া তো আগে এতো গুছানো ছিলো না বাবাহ্ বিদেশ গিয়ে তূর্য ভাইয়ার বেশ উন্নতি হয়েছে


 কথাটা বলে পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে তূর্য একদম অন্তীর মুখোমুখি দাড়িয়ে আছে। তূর্যকে দেখে অন্তী ভীত দেখার মতো চমকে উঠে।


 -আসলে ভাইয়া না মানে.....


 তূর্য অন্তীকে পাশ কাটিয়ে কাবাডের দিকে এগিয়ে যায়।কাবাড থেকে একটা ধবধবে সাদা বেড কাভার বের করে অন্তীকে ধরিয়ে দেয়।


 -নে....


 -এটা দিয়ে আমি কি করবো??


 -পড়বি!!


 -কিহ্??এটা তো বিছানার চাদর জামা না এটা তো পড়া ও যায় না


 -বাহ্ চিন্তেই তো পাড়লি এটা বেড কভার তাহলে বেড কভার যা করে তাই করবি!!


 -কিন্তু বিছানায় তো একটা চাদর বিছানো আছে


 -যা বলেছি তাই কর এতো বেশি কথা বলিশ কেন?


 অন্তী মাথা নিচু করে খুব যত্ন সহকারে বেড কভারটা বিছানা বিছিয়ে দেয়।


 -তূর্য ভাইয়া তুমি কি এখনো আমার উপর রাগ করে আছো??


 অন্তী কথাটা বলে পেছন ফিরতেই তূর্য অন্তীকে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দেয়।তারপর তূর্য অন্তীকে বিছানায় চেপে ধরে


 -আমার ঘেন্না পাওয়ারও যোগ্যতা তোর নেই আর তো!!


 -তূর্য ভাইয়া কি করছো আমার লাগছে আমি কিন্তু ফুপ্পি কে বলে দিবো


 তূর্য কোনো কথা না বলেই অন্তীর ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়.....


বন্ধুদের সারা পেলে Next part দিবো।🥀